ক্যাবল বাদেই দেখা যাচ্ছে স্যাটেলাইট চ্যানেল, সাড়া ফেলেছে ‘আকাশ’
ঢাকা: তারহীন টেলিভিশন দেখার প্রযুক্তি ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) সেবা ‘আকাশ’ এরইমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে এই প্রযুক্তি। বর্তমানে দেশের ৪৭টি জেলায় বেক্সিমকো কমিউনিকেশনের এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
ছয়মাসের ব্যবধানে এর গ্রাহক সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। ব্যবহারকারীরাও এ সেবাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ডিটিএইচ সেবা ‘আকাশ’ এর ঝকঝকে ছবি ও সাউন্ড কোয়ালিটি গ্রাহককে আকৃষ্ট করেছে।
সম্প্রতি নিজের বাসায় আকাশের সংযোগ নিয়েছেন রাজধানীর মণিপুরিপাড়ার বাসিন্দা রাকিব শেখ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দুই মাস ধরে ডিটিএইচ সেবা আকাশ ব্যবহার করছি। এক কথায় এর সেবা খুবই ভালো। পিকচার কোয়ালিটি যেমন ভালো তেমনি সাউন্ড কোয়ালিটিও।’
রাকিব আরও বলেন, ‘সমস্যা হলে ক্যাবল অপারেটরকে আগে বারবার কল দিতে হতো। বিল পরিশোধেও ঝক্কিঝামেলা ছিল। কিন্তু আকাশের বিল ঘরে বসেই পরিশোধ করা যাচ্ছে।’
বিজ্ঞাপন
মিরপুরের আরেক গ্রাহক রনি বলেন, ‘আকাশ ব্যবহার করায় এখন টেলিভিশনের পিকচার কোয়ালিটি আগের চেয়ে ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ডিশের চেয়ে অনেক ভালো। সাউন্ড কোয়ালিটিও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আর এইচডি দেখার সুবিধা তো রয়েছেই।’
সিলেটের সুনামগঞ্জের ব্যবহারকারী নীল প্রান্ত রাজ নীলের মন্তব্যও একই রকম।
ফেসবুকে ‘আকাশ’ ব্যবহারকারীদের কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। অধিকাংশ ব্যবহাকারীকেই সেখানে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। তবে দুই একজন মাসিক বিল আরও কমানোর কথা বলছেন। ওই গ্রুপে মিজানুর রহমান রনি নামের একজন লিখেছেন, ‘আকাশ আসলেই আকাশের মত। খুব ভালো পিকচার কোয়ালিটি। এলাকার ডিশ কানেকশনের চেয়ে আকাশের কানেকশন কোয়ালিটি অনেক উন্নত। তবে মাসিক পেমেন্টটা কমালেই আকাশের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে।’
একই রকম মন্তব্য করে শাহীনবাগের বাসিন্দা মাজহারুল হক অনিক বলেছেন, ‘মাসিক বিল কমালে আকাশ আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।’
কয়েকজন ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে কথা হলে তারা জানিয়েছেন, আকাশের ক্রেতা দিনদিন বাড়ছে। মোহাম্মদপুরের অ্যাডভান্স নেটওয়ার্কের মালিক মিকাইল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রাহকের মধ্যে আকাশ নিয়ে ভালোই সাড়া রয়েছে। গত মাসে আমরা ১৫০টি সংযোগ বিক্রি করতে পেরছি। এ মাসেও এখন পর্যন্ত এমন বিক্রি হয়েছে। তবে দিন দিন গ্রাহক বাড়ছে।’
আরেক ডিস্ট্রিবিউটর রাজশাহীর তাসনিম টেলিকমের গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘গত মাসের চেয়ে এ মাসে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। গত মাসে ২০টি সংযোগ দিতে পেরেছিলাম। এ মাসে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের বাসায় সংযোগ দিয়েছি।’
চলতি বছরের ১৯ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ডিটিএইচ সেবা ‘আকাশ’ যাত্রা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে এ সেবা দিচ্ছে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেড। প্রথমদিকে ২০ টি জেলায় এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে ৪৭টি জেলায় তা ছড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে আকাশের গ্রাহক ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আকাশ ডিটিএইচ’র হেড অব টেকনোলজি আনোয়ারুল আজীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আকাশ বেশ সাড়া ফেলেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রাহকেরা জানতে চাইছেন তাদের এলাকায় আকাশের সেবা কবে চালু হবে? প্রথমদিকে আমরা আংশিক বাংলাদেশে সেবা শুরু করেছিলাম। বর্তমানে তা পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। গ্রাহকেরাও নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানাচ্ছেন।’
আজীম জানান, আকাশের গ্রাহক হতে হলে স্বীকৃতি কোনো ডিলারের কাছ থেকে এককালীন খরচে সেটআপ বক্স, রিমোট কন্ট্রোল ইউনিট, ক্যাবল অ্যান্ড কানেক্টর, ডিশ এন্টেনা ও সিগন্যাল রিসিভার কিনতে হবে। ডিলাররা বাসায় গিয়ে সব যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করে দিয়ে আসবেন। ক্যাবল অপারেটরের কাছ থেকে সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন তারের সংযোগ প্রয়োজন পড়ে এতে সেই ঝামেলা নেই। তবে আকাশের এন্টেনা থেকে ছোট্ট তারে টিভির সঙ্গে সংযোগ দিতে হয়। আকাশের মাসিক বিল ৩৯৯ টাকা। আকাশ ডিটিএইচ সেবা নিতে প্রথমে গ্রাহককে ব্যয় করতে হবে ৫ হাজার ৪৯৯ টাকা। বর্তমানে আকাশ সেবা ব্যবহার করে ১২০ টি চ্যানেল দেখা যাবে। এর মধ্যে ৪০ এর অধিক এইচডি চ্যানেল।
আজীম আরও জানান, আকাশ ব্যবহারে গ্রাহকেরা প্রোগ্রাম রিমাইন্ডার ও টিভি শিডিউলের সেবা পাবেন। শতাধিক চ্যানেলে ভিড়ে চাইলে নিজের প্রিয় চ্যানেলগুলোর তালিকাও তৈরি করতে পারেন তারা। ভবিষ্যতে প্রাইভেট ভিডিও রেকর্ডিং সেবা চালুর কথাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের ভেতের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাহক দুটি- টেলিভিশন চ্যানেল ও ডিটিএইচ সেবা আকাশ। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টরকে সুবিধা দেওয়ারও চেষ্টা চলছে। তবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের এখন পর্যন্ত আকাশই সবচেয়ে বড় গ্রাহক। ৪০ টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে তারা ছয়টি ভাড়া নিয়েছে, আর তা ব্যবহার করেই তারা ডিটিএইচ সেবা দিচ্ছে।’
গত বছরের ১২ মে বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১'র সফল উৎক্ষেপণ হয়। উৎক্ষেপণের ছয় মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মালিকানা ও দেখভালের দায়িত্ব বুঝে নেয় বাংলাদেশ। এর পর থেকে বাংলাদেশ কমিউনেকশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)'র অধীনে স্যাটেলাইটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ চাম্পিয়নশিপ সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও সফলতা দেখিয়েছি দেশের এই স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিটিভিতে ওই খেলা দেখানো হয়। বর্তমানে দেশের সবকটি টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
0 Comments